তেঁতুলতলা মাঠটা আমি চিনি। এমন কোনো মনকাড়া মাঠ নয়। ঘাসহীন ন্যাড়া এই একচিলতে খোলা জায়গাকে অনেকে মাঠ বলতে আপত্তিও করতে পারেন। আশপাশে আবাসিক ভবন, মাঠের কোনার দিকের উল্টো পাশে মসজিদ, মাঠের এক কোনায় একটা পানির পাম্পের মতোও আছে। পাশ দিয়ে চলে গেছে মহল্লার সরু রাস্তা।
ঠিক মাঠের মতো না হলেও স্থানীয়দের কাছে ওটাই মাঠ। শিশু, কিশোর, তরুণ, এমনকি বয়স্কদেরও নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা। আমি দেখেছি এ মাঠে বাচ্চারা সাইকেল চালানো শেখে। ছোট গোলপোস্টে ফুটবল খেলা হয়। চক পাউডারে পপিং ক্রিজ এঁকে হয় ক্রিকেট। শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলা, ঈদে হয় নামাজ।
এলাকার কিশোর-তরুণ বয়সীরা এখানে মাঝেমধ্যে ক্রিকেট, ফুটবলের টুর্নামেন্ট ছাড়ে। অনেক সময় খেলা হয় রাতে, নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা করা ‘ফ্লাডলাইট’ জ্বালিয়ে। তখন কলাবাগানের এই পাড়ায় উৎসবের আবহ বিরাজ করে।
মাঠের পাশে চেয়ার পেতে বসে, দাঁড়িয়ে মা-বোনেরা খেলা দেখেন। মসজিদ থেকে বের হয়ে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে পড়েন খেলা দেখতে। আমি নিজেও অনেকবার এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলের গতি কমিয়েছি, হেঁটে গেলে দাঁড়িয়ে পড়েছি। বাচ্চাদের খেলা দেখেছি। মনের আনন্দে খেলা বলতে যা বোঝায়, সে খেলাটাই হয় কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে। ঠিক যেমন আমরা ছোটবেলায় খেলতাম।
কুমিল্লা শহরের পাড়ামহল্লায় মাঠের অভাব ছিল না। এক ঠাকুরপাড়াতেই তো কত মাঠ ছিল! মনের আনন্দে খেলার মাঠ। আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করার মাঠ। ঘাসের মাঠ। বালুর মাঠ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার মাঠ। মদিনা মসজিদ মাঠ। মডার্ন স্কুল মাঠ। বাসার সামনের মাঠ। উঠতি বয়সীদের বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করার মাঠ। কত যে মাঠ!
আমরা খেলতাম মকবুল স্যারের মাঠে। কুমিল্লা জিলা স্কুলের স্বনামধন্য ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় মকবুল আহমেদ স্যার। তাঁর বাসার সামনে নারকেলগাছে ঘেরা বড় জায়গা ছিল। সেটাই ছিল আমাদের খেলার মাঠ।
স্কুল খোলা থাকলে খেলা হতো বিকেলে। স্কুল বন্ধের সময় সকাল-বিকেল দুই বেলা। চিৎকার-চেঁচামেচিতে স্যারের বাড়ি আমরা মাথায় তুলে রাখতাম। বর্ষাকালে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলে বাড়িটাকে করে তুলতাম কাদায় মাখামাখি। স্যারের ধবধবে সাদা বাড়ির দেয়ালে কাদামাখা ফুটবলের ছাপ কম পড়েনি।